Love_Is_Right_In_Front_Of_You_kuku tv 2025 Bengali Dubbed ORG Reel Flim 720p WEB-DL 1Click
আঠারো বছর আগে, একটি রাস্তা দুর্ঘটনায়, এক পরিবারের তৃতীয় কন্যা তার সন্তানদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া তার বাবার দ্বারা পরিত্যক্ত হয়। তার বড় ভাইকে রক্ষা করার চেষ্টা করতে গিয়ে, সে আহত হয় এবং প্রচণ্ড রক্তপাতের কারণে এক ঝড়ো রাতে মৃত্যুর মুখে পৌঁছে যায়
আঠারো বছর আগের কথা।
এক ঝড়ো রাত—যে রাতের স্মৃতি আজও কেউ ভুলতে পারেনি। আকাশ ছিল ছিঁড়ে যাওয়া মেঘে ঢাকা, বিদ্যুৎ চমকে দিগন্ত আলোকিত হচ্ছিল বারবার। শিশিরপুর গ্রামের প্রতিটি মানুষ সেই রাতটিকে মনে রেখেছে, কারণ সে রাতে ঘটে গিয়েছিল একটি পরিবারের ইতিহাস পাল্টে দেওয়া এক নির্মম ঘটনা।
১. অবহেলার ঘরে বেড়ে ওঠা মেয়ে
পরিবারটির তিনটি সন্তান—রাহুল, নীলা আর ছোট বোন রিন্তি।
রাহুল বাবার গর্ব, নীলা পরিবারের বুদ্ধিমতি মেয়ে, আর রিন্তি?
সে যেন এই পৃথিবীতে জন্মই নিয়েছিল ভুল করে।
রিন্তি ছোটবেলা থেকেই অনুভব করত—বাবার চোখে সে অদৃশ্য। তার হাসি বাবাকে খুশি করত না, কান্না স্পর্শ করত না, কোনো কাজই যেন তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবুও সে সর্বোচ্চ চেষ্টা করত নিজের পরিবারকে ভালোবাসতে।
মা অবশ্য তাকে খুব স্নেহ করতেন। কিন্তু মা–ও সবসময় বাবার কঠোরতার সামনে অসহায় ছিলেন।
রিন্তি ছিল নরম হৃদয়ের মেয়ে।
তার জীবনের সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল তার বড় ভাই রাহুল।
রাহুল সবসময় তাকে সুরক্ষা দিত, সান্ত্বনা দিত, আর বলত—
“তুই দুঃখ পাবি না রিন্তি, আমি আছি।”
কিন্তু ভাগ্যের কথা কেউ জানে না।
২. ঝড়ো রাতের সূচনা
সেই রাতে নীলার জন্মদিনের অনুষ্ঠান শেষে সবাই বাড়ি ফিরছিল। আকাশে তখনই শুরু হয়েছে ঝড়ের প্রস্তুতি। বৃষ্টি টুপটাপ পড়ছে, বাতাসে কেঁপে উঠছে গাছের ডাল।
রাহুল সবার আগে রাস্তায় নেমে যায়।
দূরে একটি মিনি ট্রাক গর্জন করে এগিয়ে আসছিল, নিয়ন্ত্রণ হারানো আগুনের মতো।
রাহুল তখনো বুঝতে পারেনি যে সে বিপদের খুব কাছে চলে গেছে।
বাবা ব্যস্ত ছিলেন নীলাকে বকাঝকা করতে, মা ব্যাগ গোছাচ্ছিলেন।
রিন্তি দূর থেকে দেখল—রাহুল মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে, আর দ্রুতগতির ট্রাক তার দিকে আসছে।
সে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করেনি।
৩. মৃত্যুকে ঠেকাতে এক শিশুর দৌড়
হাওয়ার ঝাপটা তার গালে লাগছিল, বৃষ্টি তার চোখে ঢুকছিল, কিন্তু সে পরোয়া করেনি। সে শুধু দৌড়াচ্ছিল নিজের ভাইয়ের দিকে, প্রাণপণে, মরিয়া হয়ে।
“রাহুল! সরে দাঁড়াও!”—রিন্তি চিৎকার করল।
কিন্তু রাহুল বুঝতে পারার আগেই রিন্তি তাকে জোরে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার বাইরে ফেলে দিল।
ঠিক সেই মুহূর্তে—
ধাম!
মিনি ট্রাকটি রিন্তির গায়ে আঘাত করে।
তার ছোট দেহ মাটিতে পড়ে যায়।
চারদিকে ছিটকে পড়ে রক্ত, বৃষ্টির পানির সাথে মিশে যায় লাল অশনি-স্রোত।
৪. পৃথিবী ধীরে ধীরে অন্ধকার হতে লাগলো
ঝড়ের শব্দও সেই মুহূর্তে থমকে গিয়েছিল যেন।
রাহুল ছুটে এসে বোনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল—
“রিন্তি, চোখ খোলো… আমি দোষী… আমাকে ছাড়া তুই যাস না…”
কিন্তু রিন্তির চোখের পাতা ভারী হয়ে আসছিল।
শ্বাস কষ্ট হচ্ছিল।
কথা বলার শক্তিও আর ছিল না।
সে শুধু বলল—
“ভাই… তুমি আছো… এটাই যথেষ্ট…”
এই কথা বলতে বলতেই সে আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলল।
৫. বাবার অদ্ভুত নীরবতা
মা ছুটে এসে চিৎকার করে উঠলেন, রাহুল বিধ্বস্ত, নীলা কান্নায় ভেঙে পড়ল—
কিন্তু বাবা?
বাবা দূরে দাঁড়িয়েছিলেন।
কোনো দৌড়ঝাঁপ, কোনো আতঙ্ক, কোনও কান্না নেই—
তিনি শুধু তাকিয়ে ছিলেন, যেন কিছুই ঘটেনি।
পাড়ার লোকজন পর্যন্ত ফিসফিস করে বলছিল—
“আরে মেয়েটা তো মরতে বসেছে… বাবা এত শান্ত কেন?”
মা চেঁচিয়ে বললেন—
“আপনি দাঁড়িয়ে কী করছেন? ওকে কোলে নিন!”
কিন্তু বাবা নড়লেন না।
তার মুখে যেন ছিল—
“এই মেয়েকে নিয়ে আমাকে ভাবতে হবে কেন?”
রিন্তির দিকে তাকানোর চোখও যেন করুণা-বিহীন ছিল।
৬. হাসপাতালে যাওয়ার যাত্রা
অবশেষে পাড়ার লোকজনই তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায়।
অবস্থা ছিল অত্যন্ত জটিল—অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, হাত-পা ভেঙে যাওয়া, মাথায় আঘাত।
ডাক্তার বললেন—
“এই মেয়েটাকে বাঁচানো খুব কঠিন… আমরা চেষ্টা করছি, কিন্তু অলৌকিক কিছু না হলে…”
মা কান্নায় ভেঙে পড়লেন।
রাহুল হাসপাতালের কোণে নিঃশব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল।
নীলা বাবার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠল—
“বাবা! আপনি কিছু বলছেন না কেন?”
বাবা শুধু বললেন—
“যা হওয়ার তাই হয়েছে।”
এ যেন প্রেমহীন, অনুভূতিহীন, পাথরের মানুষ।
৭. মৃত্যুর প্রান্তে দাঁড়িয়ে শিশুকন্যা
রিন্তির চেতনা বারবার ফিরছিল, আবার হারাচ্ছিল।
তার শরীরে যন্ত্রণা অসহ্য, কিন্তু তবুও সে নরম গলায় বলল—
“মা… আমি কি বেঁচে যাব?”
মা চোখের পানি লুকাতে লুকাতে বললেন—
“তুই অবশ্যই বাঁচবি মা… তুই আমাদের আলো…”
রিন্তি মৃদু হাসল।
তার হাত মায়ের হাত খুঁজতে চেষ্টা করছিল।
পরের মুহূর্তে সে আবার বলল—
“বাবা… কোথায়?”
মা থমকে গেলেন।
কথা বলতে পারলেন না।
মেয়ের নিষ্পাপ চোখের সামনে বাবার নির্মমতার চিত্র তাকে আরও ভেঙে দিচ্ছিল।
৮. ডাক্তারদের যুদ্ধ—এক জীবনের লড়াই
রাত বাড়ছিল।
ঝড় কমে এলেও হাসপাতালের ভিতরে তীব্র উত্তেজনা।
এক পর্যায়ে ডাক্তাররা বেরিয়ে এসে বললেন—
“মেয়েটা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে… এখন যা হবে, আগামী এক ঘণ্টার মধ্যেই হবে।”
মা হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন।
রাহুল মাটিতে বসে মাথা দিয়ে দেয়ালে ঠেকিয়ে কাঁদতে লাগল—
“রিন্তি… দয়া করে চলে যাস না…”
আর বাবা?
তিনি দেওয়ালে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন—
মুখে এখনও কোনো ভয়, কোনো অনুশোচনা, কোনো ব্যথা নেই।
নীলা ফেটে পড়ে বলল—
“এই মেয়েটি আপনার মেয়ে! আপনি কিছু অনুভব করছেন না?”
কিন্তু বাবার মুখে একই বরফ।
৯. অলৌকিক ফিরে আসা
হঠাৎ জরুরি ঘণ্টা বাজল।
ডাক্তাররা ছুটে এলেন।
ঘরের বাইরে থাকা সবাই নিঃশ্বাস ধরে দাঁড়াল।
মিনিট দশ পর ডাক্তার বেরিয়ে এসে বললেন—
“শরীর খুব খারাপ অবস্থায় ছিল। কিন্তু… সে বেঁচে উঠেছে।”
মা মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন কৃতজ্ঞতায়।
রাহুল বোনকে জড়িয়ে ধরতে ছুটে গেল।
মেয়েটি কোমল কণ্ঠে বলল—
“ভাই… তুমি আছো তো?”
রাহুল চোখ মুছতে মুছতে বলল—
“হ্যাঁ রে, আমি আছি। তুই আমায় বাঁচালি।”
১০. কিন্তু বাবা? তিনি তখনও একই মানুষ
রিন্তি চোখ খুলতেই প্রথমেই দেখল মা–কে, রাহুল–কে, নীলাকে—
কিন্তু বাবা নেই।
সে জিজ্ঞেস করল—
“বাবা কোথায়?”
মা আর রাহুল একে অপরের দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইল।
কেউ উত্তর দিতে পারল না।
রিন্তির চোখে হালকা অশ্রু নেমে এল।
এটাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় ব্যথা ছিল—
একটু ভালোবাসা, একটু যত্ন… যা সে কখনোই বাবার কাছ থেকে পায়নি।
⭐ শেষ কথা
সেদিনের সেই ঝড়ো রাত শুধু একটি দুর্ঘটনা ছিল না—
এটি ছিল রিন্তির জীবনের মোড় ঘোরানোর মুহূর্ত।
সে মৃত্যুকে হারিয়ে বেঁচে উঠল,
কিন্তু বাবার হৃদয়কে কখনো জয় করতে পারল না।
রিন্তির গল্প আমাদের শেখায়—
👉 ভালোবাসা সবসময় রক্তের সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে না।
👉 কখনও কখনও নিজের পরিবারই সবচেয়ে বড় অবহেলার উৎস হতে পারে।
👉 একটি শিশুর হৃদয়ে যন্ত্রণা থাকে সবচেয়ে গভীরভাবে।

No comments